About Laaibah Ruti Maker

কাঠ সিজনিং কি, সিজনিং কেনো করা হয়?

Wood-Seasoning
কাঠ সিজনিং কি, সিজনিং কেনো করা হয়?
আমরা বলে থাকি লাইবা রুটিমেকারে আমরা কাঠ সিজনিং করে থাকি ।আসলে কাঠ সিজনিং জিনিস টা কি এবং এটা কিভাবে করে কিংবা কেন করে আজকে সেই ব্যাপার টা তুলে ধরছি ।
যেকোনো কাঠের জিনিস তৈরি করতে হলে পূর্বে সঠিক ভাবে কাঠ শুকানোর পদ্ধতিকে কাঠ সিজনিং বলা হয়। আমরা গাছ থেকে সরাসরি যে কাঠ পাই তা ব্যবহারে পূর্বে শুকিয়ে নেয়া প্রয়োজন কেননা সদ্য চেরাই করা কাঠের ওজন ২০ থেকে ৮৫ ভাগ পর্যন্ত পানি থাকে। এই কাঠগুলো যখন এমন ভাবে শুকানো হয় যেন ঋতু পরিবর্তনের সাথে কাঠ গুলো সকল আবহাওয়া ও পরিবেশে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করে চলতে পারে তখন তাকে কাঠ সিজনিং বলে।
আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে বর্ষাকালে বাতাসে যখন অধিক জলীয়বাষ্প থাকে তখন আসবাবপত্র বা দরজা-চৌকাঠে ব্যবহৃত কাঠ বায়ুমণ্ডল থেকে জলীয়বাষ্প গ্রহণ করে আয়তনে বৃদ্ধি পায় এবং একই ভাবে শীতকালে বাতাসে যখন জলীয়বাষ্প কম থাকে তখন তাতে নিজের অভ্যন্তরীণ পানি ত্যাগ করে বেঁকে যায়। কাঠের এই আয়তন বৃদ্ধি বা হ্রাস রোধ করার জন্যই সিজনিং করা হয়।
কাঠ সিজনিং এর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যাবহৃত হয়:
১) বাষ্পচালিত চুল্লী পদ্ধতিঃ আবদ্ধ রুমে বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রিত গরম বাষ্প সঞ্চালনের মাধ্যমে রুমের ভেতরের কাঠ শুকানোর একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। রুম বা সিজনিং চেম্বার এক্ষেত্রে দুই ধরণের হয়ে থাকে-
i) ইটের গাঁথুনির দেয়াল এবং ঢালাই করা ফ্লোর ও ছাঁদ। প্রস্তুতকারক প্রদত্ত ড্রয়িং অনুসারে ও তত্ত্বাবধানে অবকাঠামো প্রস্তুত করতে হয়।
ii) প্রিফেব্রিকেটেড অবকাঠামো। এক্ষেত্রে স্টিলে তৈরি অবকাঠামো কাস্টমারের স্থানে নিয়ে এসে স্থাপন করা হয়। শুধুমাত্র ফ্লোর প্রদত্ত ড্রয়িং অনুসারে কাস্টমারকে ঢালাই দিয়ে প্রস্তুত করতে হয়।
একত্রে কত CFT কাঠ সিজনিং করা হবে তার উপর ভিত্তি করে রুমের সাইজ ও বয়লারের ক্যাপাসিটি নির্ধারিত হয়। বাইরে থেকে সংযুক্ত একটি বয়লার এবং সিজনিং চেম্বার কক্ষের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা স্বয়ংক্রিয় ও আধুনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দ্বারা চালিত হয়। বয়লারের চুল্লির জ্বালানি হিসেবে লাকড়ি ব্যাবহার করা হয়। কাঠের পুরুত্ব অনুযায়ী একবার সিজনিং করতে সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগতে পারে। । সিজনিংয়ের জন্য চেম্বারে ঢুকানো কাঠ গুলোর আর্দ্রতার মান ভিন্ন ভিন্ন হলেও এই পদ্ধতিতে শুকানোর পর সকল কাঠে নির্দিষ্ট ও সমান আর্দ্রতা পাওয়া যায়। এটি বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ব্যবহৃত কাঠ সিজনিং পদ্ধতি।
২) হাই ফ্রিকোয়েন্সি ভ্যাকুয়াম ড্র্যায়ার ( সংক্ষেপে HFVD ) সিস্টেমঃ এটি কাঠ শুকানোর সর্বাধুনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি ক্যাপসুল আকৃতির বায়ুশুন্য আবদ্ধ পাত্রে উচ্চ মাত্রার বিদ্যুৎ তরঙ্গ প্রবাহিত করে কাঠ শুকানো হয়। এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকানো কালীন কাঠ ফেঁটে ও বেঁকে যাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে রোধ করা যায়। আধুনিক সকল কাঠ শুকানোর পদ্ধতির মধ্যে HFVD পদ্ধতিতে কাঠ শুকানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম সময়ের প্রয়োজন হয়। পুরুত্ব অনুযায়ী ৬ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। অধিকাংশ সময় এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকানোর পূর্বে কাঠ প্ৰক্ৰিয়াকরণ বা ট্রিটমেন্ট না করলেও চলে। এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকানোর জন্য HFVD প্রতি বৈদ্যুতিক খরচ অন্য সকল পদ্ধতির তুলনায় বেশি। প্ৰাথমিক বা স্থাপন খরচ বেশি হলেও রক্ষনাবেক্ষন সহজ ও সামগ্রিক বিবেচনায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এই পদ্ধতির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আমাদের দেশেও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কাঠ সিজনিং করছে।
৩) সৌর চুল্লী পদ্ধতিঃ এটি বৈজ্ঞানিকভাবে কাঠ শুকানোর বহুল প্রচলিত একটি সনাতন পদ্ধতি। অন্য যে কোন পদ্ধতির তুলনায় এই পদ্ধতিতে প্রাপ্ত শুকনো কাঠ এর মান অধিক উন্নত ও গ্রহণযোগ্য। স্থাপন ও রক্ষনাবেক্ষন খরচ এই পদ্ধতিতে সর্বনিন্ম তবুও আমাদের দেশে এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকানোর প্রচলন নেই বললেই চলে। দিনের অধিকাংশ সময় যেখানে সূর্যের আলোর উপস্থিতি থাকে এমন জায়গা এই চুল্লী স্থাপনের জন্য আদর্শ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তবে এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকাতে দীর্ঘ সময় লাগে। কাঠ শুকানোর সময়কাল বিবেচনায় প্ৰমান সময় হিসেবে, ০১” পুরুত্বের মাঝারি শক্ত মানের কাঠ শুকাতে ( ৩৫-৪০% আর্দ্রতা থেকে ১২-১৬% আর্দ্রতায়) আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ দিন সময় প্রয়োজন হয়। এই চুল্লী থেকে কাঙ্খিত মানের শুকনো কাঠ পাওয়ার জন্য চুল্লীতে মজুদকৃত কাঠের প্রাথমিক আর্দ্রতা ও পুরুত্ব একই হওয়া প্রয়োজন।
৪/প্রাকৃতিক পদ্ধতিঃ এটি আমাদের দেশে প্রচলিত কাঠ শুকানোর পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকানোর ক্ষেত্রে ০৩ থেকে ০৬ মাস বা ক্ষেত্র বিশেষ আরো অধিক সময় প্রয়োজন হয়। এই পদ্ধতিতে খোলা জায়গায় কাঠ রেখে সূর্যের তাপে ও বাতাসে কাঠ শুকানো হয়। এছাড়া উপরে চালা ও পাকা মেঝেতে, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কাঠ স্ট্যাক করে যদি ( তক্তা কাঠের ক্ষেত্রে একটির উপর আরেকটি এবং কাঠদ্বয়ের মাঝে টুকরা কাঠ রেখে এবং বাটাম কাঠ একটি থেকে আরেকটি মধ্যে ফাঁকা জায়গা রেখে পাশাপাশি ও উপরে উপরে স্ট্যাক করে ) পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা হয় এবং কিছুদিন পরপর যদি কাঠ গুলো পুনঃবিন্যাস করা হয় তবে এই পদ্ধতিতে ভাল ফলাফল আশাকরা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে শুকানো কাঠে আদ্রতার হার ভিন্ন ভিন্ন হয় যার দরুন এই পদ্ধতিতে শুকানো কাঠ ব্যবহারে প্রস্তুতকৃত আসবাবপত্র বা দরজা-চৌকাঠে পরবর্তীতে ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
Source: Collected
Back to list

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *